একটি এপলিটিকাল ব্রেকিং নিউজ

(এর ওপেনিং সং হিসেবে ব্যাকগ্রাউন্ডে পুরন্দর ভাটের লেখা 'গাঁড় ভেঙে দাও' গানের ইন্সট্রুমেন্টাল ফর্ম বাজবে)

স্থান: ভারতবর্ষের কোনো এক অখ্যাত জায়গার খাবার টেবিল
সময়: সন্ধ্যেবেলা, ঠিকঠাক সময় এখনো জানা যায়নি।

প্রচুর মদ, সবরকম মাংস ও প্রচুর সুখাদ্যের আয়োজন আছে শুনে মদন, পুরন্দর এবং ডি এস উড়তে উড়তে এসে নেমেছিল ওখানে। আনঅফিশিয়ালি বলা যায়, জায়গাটা ছিল সুমিত ঘোষের বেলঘড়িয়ার ফ্ল্যাট। সে যাইহোক, ওরা এসে দেখে, সমস্ত সুখাদ্য এবং মদের বোতল জীবন্ত হয়ে উঠেছে এবং একে অন্যের সাথে বার্তালাপে মগ্ন। মদনের জবানীতে, 'আমরা যখন এসে পৌঁছাই, আমরা অল্প চরস মেরেই এসেছিলাম। বুঝলেন কিনা, ফ্যাতারু হলে সবই চলে, লাশ উঠাবে, লাশ নামাবে এরকম সবকিছুই আরকি। সমস্যাটা হল, আমরা যখন নামলাম, তখন দেখলাম, সমস্ত আইটেমের আলুরা একজোট, পেঁয়াজরা একজোট, মাছের টুকরোরা একজোট, যেন উনিশের ভোটের মহা জোটবন্ধন হয়েছে এখানে!'
মদের বোতল সম্পর্কে ডিএসের বক্তব্য, তারা নাকি নকল স্তন লাগিয়ে অসভ্য কাজ করছিল, ডি এসের এই বক্তব্য ভেরিফাই করা সম্ভব হয়নি। ডি এস এবং মদন উভয়েই ভীষণ হ্যাল খাচ্ছিল, ওরা উড়তে পারছিল না। আমাদের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট তাই ওদের কিছুটা ধেনো খাইয়ে কথা বের করেন। তাদের অসংলগ্ন কথা সাজিয়ে যা বোঝা যায় তা খুবই শকিং।
পেঁয়াজরা সকলকে সাজিয়ে এককাট্টা করে, স্যালাদের ভিনিগার দেওয়া পিকল্ড পেঁয়াজ খুবই এগ্রেসিভ ভাবে বলে, 'চাষ করতে গিয়ে প্রচুর চাষী মরেছে। বিশেষত আমাকে চাষ করে। আমার দাম দিয়ে দেশের বাজারের অবস্থা দেখা হয়। তাই, এবারে, আমি আবার প্রধান সবজি আখ্যা পাবো।' আলু এই নিয়ে ভীষণ উত্তেজিত হয়ে ওঠে, তার পর্তুগিজ উচ্চারণে ভীষণ গালি দিয়ে যা বলে তার মূল বক্তব্য, আলু একমাত্র নিরামিষ সবজি যা সমস্ত জায়গায় ব্যবহার করা যায়, তা আমিষ হোক বা নিরামিষ, তাই আলুকেই প্রধান সবজি করার দাবি জানায় এবং সগর্বে বলে যে, এক বিশেষ মনুষ্যসম্প্রদায়ও তাকে তুলে ধরবে, লগা দিয়ে ঠেকনো দেবে। পুরন্দর ভাট তার অসামান্য কবিপ্রতিভায় একটি পদ্য রচনা করে এই নিয়ে-

"গ্রেভি হতে উঠে আসে আলু বড় লাল
হাত সাথে জোট করে ভীষণ আবাল
ভোটরণে যোগ দেয় হাতের সনে
ভোটশেষে পুনঃঠাপ খায় দুখীমনে

হরিবল হরিবল"

কার লগা, কিসের লগা এবং লগা-ই বা কেন, সে প্রসঙ্গে আলু বিশেষ উচ্চবাচ্য করেনি যদিও।
অন্যদিকে মাছের টুকরোরা চিকেনের টুকরোকে ক্রমাগত ভেংচি কেটেছে এই আনন্দে যে দিন দিন চিকেনের দাম কমে যাচ্ছে এবং মাছের দাম বাড়ছে। আর সে কারণে নিওলিবারাল ইকোনোমি কে সে দারুনভাবে আদর করছে। মাটন গ্রূপ, অর্থাৎ পাঁঠা এবং ল্যাম্ব, যেহেতু টেবিলে তাদের পাশেই মদের বোতলগুলো রাখা আছে, তারা গম্ভীর এবং এলিট বুড়ো সাধুর মত মুখ করে বসে আছে। অন্য দিকে পর্ক এবং বিফ আইটেমগুলি নিজেদের মধ্যে কমিউনাল দাঙ্গা শুরু করার জন্য নিজেদের মধ্যেই গা-গরম করা বক্তৃতা দিচ্ছে। পুরন্দর এই নিয়ে একটা প্যারোডি লেখার চেষ্টা করেছিল, অল্প যে কটা লাইন লিখতে পেরেছিল এই হ্যাল খাওয়া অবস্থায়,

"কদম কদম বাড়ায়ে যা, রামকে গীত গায়ে যা
কদম কদম বাড়ায়ে যা, আল্লাহ কে নাম লিয়ে যা

কাটারী হ্যায় স্টিলকি, তু বিধর্মী কো মারে যা..."

কমিউনাল গান কিন্তু তা একসঙ্গে কেন, দুটোর হাইব্রিড কেন হল গানটা এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে পুরন্দর ভীষণ রেগে যায়, কামড়াতে আসে কিন্তু মদন ও ডি এস তাকে কোনো চেপে ধরে সামলে নেয়। এর পর তারা আর কিছু বলতে অস্বীকার করে এবং 'ফ্যাৎ ফ্যাৎ সাঁই সাঁই' বলে উড়ে যায়। আমাদের করেসপন্ডেন্ট স্বীকার করেন পরবর্তীকালে, তিনি ভীষণ ভয় পেয়েছিলেন, তবে আশ্বস্ত হয়েছিলেন এই ভেবে যে পুরন্দর-ভাট হতে পারে, গে নয়। আর কি কি হয়েছিল ওখানে, জানার জন্য ফ্যাতারুদের খুব করে খোঁজা সত্বেও তাদের পাওয়া যায়নি আর।

(নবারুণ ভট্টাচার্য্য কে এক অর্বাচীন তরুণ লেখকের শ্রদ্ধার্ঘ্য। গঙ্গাজলেই গঙ্গাপূজা হল, নবারুণ থাকলে ক্ষমা চেয়ে নিতাম। তিনিই নেই যখন, কি করা যাবে আর।)


(*এই লেখাটি 'চলিত কুয়াশা' ম্যাগাজিনের বইমেলা সংখ্যা 2019 এ প্রকাশিত)

Comments

Popular posts from this blog

খিস্তিচরিত-তৃতীয় কিস্তি

খিস্তিচরিত-চার কিস্তিতে